ইউটেরাসের মুখের অংশকে বলে সার্ভিক্স। এই অংশটি ইউটেরাসের সঙ্গে ভ্যাজাইনার সংয�োগ স্থাপন করে। এই সার্ভিক্সের কোষের ক্যান্সারকে বলে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার। ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের স্থান। প্রথম স্থানে আছে ব্রেস্ট ক্যান্সার। র�োগের কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) ইনফেকশন থেকে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার হয়। তবে সব ধরনের এইচপিভি ভাইরাস থেকে ক্যান্সার হয় না। এই ভাইরাসের বিশেষ কিছু স্ট্রেন, যেমন— এইচপিভি ১৬, ১৮ স্ট্রেনগুলি সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। সাধারণত এই ভাইরাসটি শারীরিক ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমেই শরীরে প্রবেশ করে। আজ ভাইরাস ঢুকল মানে কালই বা এক বছরের মধ্যেই ক্যান্সার হবে— এমনটা কিন্তু নয়। শরীরে প্রবেশ করার ২০ বছর বাদেও এই ভাইরাসের কারণে ক্যান্সার হতে পারে। সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের মূল কারণ এইচপিভি ভাইরাস হলেও অন্যান্য কারণেও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া সম্ভব। অনেকসময় জিনগত কারণেও মহিলারা সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। আবার কিছু ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনও কারণই খুঁজে পাওয়া যায় না। অবশ্য এই দুই ধরনের রোগীর সংখ্যা খুবই কম। কাদের ঝুঁকি বেশি মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক ঘনিষ্ঠতা, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণী, গ্রামীণ অঞ্চলের অধিবাসী— এমন মহিলাদের সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সাধারণত ৩৫ বছর বয়সের পর, মেনস্ট্রুয়েশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর (মেনোপোজ) এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। র�োগের উপসর্গ ভ্যাজাইনা থেকে রক্তপাতই এই রোগের প্রধান উপসর্গ। মেনোপজের পর রক্তপাত, মেনস্ট্রুয়েশনের সময় বাদেও অন্য সময় রক্তপাত, শারীরিক ঘনিষ্ঠতার পর ব্লিডিং ইত্যাদি ইনফেকশনের লক্ষণও দেখা যেতে পারে। ভ্যাজাইনা থেকে হোয়াইট ডিসচার্জ হয় অনেক ক্ষেত্রে এই রোগের প্রথমাবস্থায় কোনও লক্ষণ থাকে না। সেই সুয�োগে রোগ মূত্রনালী, লিভার বা অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। তখন বিভিন্ন উপসর্গদেখা দেয় এছাড়া দুর্বলতা, অ্যানিমিয়া এই ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ। র�োগ নির্ণয় এই রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করা হয়ে থাকে। প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষার রিপোর্টেক্যান্সার প্রমাণ হলে বায়োপসি করে দেখে নেওয়া হয়। ক্যান্সার কোথায় কোথায় ছড়িয়েছে বোঝার জন্য প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান, সিরিজ বায়োপসি করা হয়ে থাকে। চিকিৎসা প্রাথমিক পর্যায়, অর্থাৎ স্টেজ-১ বা ২এ-তে ক্যান্সার ধরা পড়লে সার্জারি করে সার্ভিক্স, ইউটেরাস, ভ্যাজাইনার কিছুটা অংশ বাদ দেওয়া হয়। প্রয়োজনমতো ল্যাপারোস্কোপি এবং ওপেন সার্জারি— দুই পদ্ধতিতেই এই অস্ত্রোপচার করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা হলে ৯০ শতাংশ রোগীই সুস্থ হয়ে যান। রোগ ২বি, তৃতীয় পর্যায়ে এগিয়ে গেলে আর সার্জারি করা যায় না। এক্ষেত্রে কেমো এবং রেডিয়েশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করতে হয়। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগী এই চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যান। অসুখ ফোর্থ স্টেজে পৌঁছে গেলে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মাধ্যমে রোগীর উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করতে হয়। র�োগ প্রতির�োধ এইচপিভি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী টিকা এখন সহজেই বাজারে পাওয়া যায়। এই টিকাটি ৯ থেকে ২৬ বছর বয়সের মধ্যে বা শারীরিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক শুরু করার আগে নিতে হয়। এই ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই এড়ানো যায়। আর ভ্যাকসিন নেওয়া না থাকলে প্রথম পর্যায়েই রোগ নির্ণয়ে জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনও লক্ষণ না থাকলেও ২১ বছর বয়সের পর থেকে প্যাপ স্মিয়ার টেস্টটি করানো শুরু করতে হবে। প্রথম দিকে চার থেকে পাঁচ বছর অন্তর এই টেস্ট করা দরকার। টেস্ট রিপোর্টে কোনও রকম খারাপ পরিবর্তন দেখা দিলে এক বছর অন্তর এই টেস্ট করতে হবে। তবেই প্রাথমিক স্তরে রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব। লিখেছেন সায়ন নস্কর